শিহরণ লাগলো, প্রথম পাতায় লেখকের আত্মবয়ানটুকু পড়েই ভেতরে এক অদ্ভুত শীতল স্রোত অনুভূত হলো। তিন ফর্মার কবিতাবই, কবি সাকিব শাকিলের লেখা। বইটির নাম- ‘আঙুলের ডগায় শীত’, ২০২০ এর অমর একুশে বইমেলায় প্রকাশ করেছে ঘাসফুল প্রকাশনী।
কবির শব্দবুননের দারুণ রসায়ন বইটি কিনতে বাধ্য করলো। এ সময়ের পরিপার্শ্ব, ঘুণেধরা সমাজ, মুক্তজবানরোধী রাষ্ট্র, জনজীবনের অক্ষমতার জঠরে পুঞ্জীভূত ক্রোধ প্রভৃতি সুনিপুণভাবে প্রতিভাত হয়েছে প্রায় প্রতিটি কবিতায়। কবি বলছেন- ‘ক্ষমতা একটি পরম নৈকট্য ফল যা ভণ্ডরা ভোগ করে অবৈধ পিরিচে।’
নিবিষ্ট পাঠকচোখে বইটি পড়ার পর মনে হলো কিছু চরণ উদ্ধৃত না করলেই নয়-
‘জীবন এক কথা না বলতে পারা বোবা পাথর
স্বাধীনতাও সম্ভবত তাই।
মুক্তির নামে শুধু মৃত্যুরই অপচয়!’
[প্রশ্ন কোরো না মন]
‘সমস্ত দেবালয় ভরে যায় শয়তানের হৃদয়ে হৃদয়ে।
আর তারাই শ্রেষ্ঠ মানুষ বিবেচিত-
যাদের মননে ও মগজে গভীর শয়তান লুকায়িত;
বিদ্বেষের বিদ্বান সেজে যারা শহরে হেঁটে যায়
পর্দানশীন পাছা দুলিয়ে এবং সেইসব পুরুষও-
যারা ডুবে ডুবে জল খেতে নিয়ে সাঁতারে মারা গিয়েছিলো মাদারচোদের মতো।’
[আর শিকারি চোখগুলোই জেনে যায় হরিণের গতিবিধি]
‘তোমার সেমিজের মতোই ঘেমে ঘেমে গলে যায় মোলায়েম হৃদয়
তান্ত্রিক বিকাল বেয়ে বেয়ে মৃত ইচ্ছেরা ঘুমায় ঝিমধরা সময়ে।
জলের মতো নরম মনগুলো বাষ্পীয় চোখে চেয়ে আছে দ্যাখো-
এ বছর বৃষ্টি যাবে খুব
অথচ আমাদের চুমু খাওয়া হবে না।’
[চারু-৩]
‘আমরা পেট ভর্তি ক্ষুধা আর পকেট ভর্তি হাহাকার নিয়ে রবীন্দ্র ভাষা ভুলে যাই।’
[আমি শালা টাকা’ই কামাবো]
‘ওমুক ভাই তমুক ভাইয়ের নামে শ্লোগান দিয়ে মুখে ফেনা তোলার চেয়ে
একবার চুদির ভাই বলে চুপ থাকা ভাল।
চেতনার লিঙ্গ আস্ফালনের বক্তব্য দেয়া কুবুদ্ধিজীবির বয়ান থেকে
মালখোর হরিদাশ আমার বেশি প্রিয়।
যেহেতু মাতালকে কখনো তেলবাজি এবং মিথ্যা বলতে শুনিনি।’
[বায়োডাটা]
‘বস্ত্র কিনতে পারছেন না
নগ্ন থাকুন।
চারপাশে এত নির্লজ্জ বিষয়ের ভেতর
নগ্নতাই উৎকৃষ্ট শিল্প!’
[ওগো দুঃখ জাগানিয়া তোমায় গান শোনাবো]
শাকিলের প্রথম বই হিসেবে ‘আঙুলের ডগায় শীত’ বেশ পোক্ত। শব্দভাণ্ডার তার সমৃদ্ধ নিঃসন্দেহে, জীবনপাঠও গভীর। বইটি পাঠান্তে নানাজনের নানা মত থাকবে। কিন্তু আমি বলবো- শাকিলের এ কাব্যবয়ান তার কবিত্বের সুদূর গন্তব্যেরই ইঙ্গিত বহন করছে।কবি শাকিলের কবিতার সবচে’ বড় বৈশিষ্ট্য হলো- সৎ সাহস, নির্ভীকতা। তার কবিতার নির্যাস এই- ‘যা দেখেছি তা-ই বলেছি, যা পারিস করিস ব্যাটা।’
আহমেদ তানভীর
সম্পাদক, ৎ খণ্ড-ত